পানি ব্যবহারের হুকুম
১। মাসআলাঃ পানির সঙ্গে কোন নাপাক জিনিস মিশ্রিত হইয়া যদি পানির রং গন্ধ, স্বাদ এই তিনটি গুণই (ছিফাতই) বদলাইয়া ফেলে, তবে সেই পানি কোনরূপেই ব্যবহার করা দুরুস্ত নহে। গরু, গাধাকে পান করানও দুরুস্ত নহে, এবং মাটিতে বা চুন-সুরকিতে মিশাইয়া কাজ করাও দুরুস্ত নহে। আর যদি তিনটি গুণ না বদলাইয়া থাকে, দুইটি বা একটি বদলিয়া থাকে, তবে সেই পানি গরু ঘোড়াকে পান করান বা মাটিতে মিশাইয়া কাজ করা জায়েয আছে, কিন্তু এইরূপ পানি মিশ্রিত মাটি বা কাদার দ্বারা মসজিদ লেপা দুরুস্ত নহে।
২। মাসআলাঃ নদী, খাল, বিল, হ্রদ, সমুদ্র এবং যে ঝর্ণা বা পুষ্করিণীর কোন মালিক নাই, অথবা কেহ পুষ্করিণী বা কূপ খনন করিয়া আল্লাহর ওয়াস্তে সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য ওয়াকফ করিয়া দিয়াছে, এই সমস্ত পানিই জাতি ধর্ম, দেশ-কাল নির্বিশেষে সর্বসাধারণ ব্যবহার করিতে পারিবে। কাহারও নিষেধ করিবার কোন অধিকার নাই। অবশ্য যদি কেহ এমনভাবে পানি ব্যবহার করিতে চায়, যাহাতে সর্বসাধারণের ক্ষতির আশঙ্কা আছে; যেমন, যদি কেহ পুষ্করিণী হইতে খাল কাটিয়া গ্রাম ডুবাইয়া ফেলিতে চাহে, তবে তাহার জন্য জায়েয হইবে না। এইরূপ নাজায়েয কাজে তাহাকে বাধা প্রদান করিতে হইবে এবং বাঁধা প্রদান করিবার অধিকার সর্বসাধারণের আছে। ━শামী
৩। মাসআলাঃ কাহারও নিজস্ব জমিতে যদি ঝর্ণা, পুষ্করিণী, কূপ, হাউয বা কাটা খাল থাকে তবে সেই পানি হইতে পান করিবার, কাপড় ধুইবার, ওযূ-গোছল করিবার, থালা বাসন ধুইবার, পাক করিবার, গরু-বাছুরকে খাওয়াইবার বা কলস ভরিয়া নিয়া বাড়ির গাছের গোড়ায় ঢালিবার পানি নিতে কাহাকেও বাধা দিতে পারিবে না। কেননা, পানির মধ্যে সকলেরই হক আছে। অবশ্য যদি গরু মহিষ এত অধিক পরিমাণে কেহ আনে যে, তাহাতে পানি ফুড়াইয়া যাইবার বা পুষ্করিণী বা কূপের ক্ষতি হইবার আশংকা হয়, তবে বাধা দিতে পারিবে আর যদি সে পানি নিতে বাধা দেয় না বটে, কিন্তু সে তাহার জমিতে আসিতে বাধা দেয়, তবে দেখিতে হইবে যে, নিকটবর্তী কোথাও পানি পাওয়া যায় কিনা, এবং তদ্দ্বারা সহজে লোকের প্রয়োজন মিটিতে পারে কি না। যদি অন্যত্র লোকের প্রয়োজন মিটিবার বন্দোবস্ত সহজে হয়, তবে ত ভালই, নতুবা এই পানিওয়ালকে বলা হইবে যে, হয় তোমার কোন ক্ষতি কেহ করিবে না এই শর্তে লোকদের পানি নিয়া তাহাদের যরূরত পুরা করিতে দাও, নতুবা তাহাদের যরূরত মোয়াফেক পানি তুমি নিজে বাহির করিয়া লোকদিগকে পৌঁছাইয়া দাও। অবশ্য এই শ্রেণির পানি মালিকের বিনা অনুমতিতে কেহ বাগিচা বা ক্ষেতে দিতে পারি না। এরূপ করিলে মালিক তাহাতে বাধা দিতে পারিবে; পানির যে হুকুম, যে সব ঘাস আপনা হইতে উৎপন্ন হয়, (চাষ বা বীজ বপন বা রক্ষণাবেক্ষণ করিতে হয় না) তাহারও সেই হুকুম। কিন্তু যে সব গাছপালা কাহারও জমিতে তাহার রোপণ ছাড়াই জন্মিবে তাহার মালিক জমিনওয়ালা হইবে। আর যে সব ঘাস সে চাষ, বপন বা রক্ষণাবেক্ষণ করিবে, তাহার মালিকও জমিনওয়ালাই হইবে।
৪। মাসআলাঃ কাহারও কূপের পানির দ্বারা কেহ তাহার ক্ষেতে বা বাগিচায় পানি দিতে চাহিলে সেই পানির মুল্য লওয়া কূয়াওয়ালার জন্য জায়েয কিনা সে সম্বন্ধে ইমামগণের মতভেদ আছে। বলখ দেশের ইমামগণ জায়েযেরই ফৎওয়া দিয়াছেন।
৫। মাসআলাঃ নদী হইতে কূপ হইতে পানি তুলিয়া কেহ তাহার বালতি মোশক লোটা বা কলসে রাখিল, তখন সেই তাহার মালিক হইয়া গেল। তাহার বিনা অনুমতিতে সে পানি খরচ করা অন্য কাহারও জন্য জায়েয হইবে না। অবশ্য যদি কাহারও পানির পিপাসায় প্রাণনাশের উপক্রম হয় এবং পানিওয়ালা তার প্রয়োজন অপেক্ষা বেশী পানি থাকা সত্ত্বেও পানি না দেয়, তবে বল পূর্বক হইলেও তাহার নিকট হইতে পানি ছিনাইয়া লইয়া যান বাঁচাইতেই হইবে। কিন্তু পরে এই পানির পরিবর্তে পানি অথবা তাহার মূল্য তাহাকে দিয়া দিতে হইবে। (খাবারও এই হুকুম, কাহারও খানা তাহার বিনা অনুমতিতে দেওয়া ত জায়েয নাই, কিন্তু যদি তাহার নিকট তাহার প্রয়োজন অপেক্ষা বেশী থাকে অথচ আপন একজন লোক ক্ষুধায় মরিতেছে তাহা সত্ত্বেও সে খুশীতে দেয় না, তখন বলপূর্বক তাহার নিকট হইতে খানা ছিনাইয়া প্রাণ বাঁচাইতে হইবে; অবশ্য পরে মুল্য দিয়া দিতে হইবে।)
৬। মাসআলাঃ যে পানি পিপাসা নিবারণের জন্য খাছ করিয়া রাখা হইয়াছে তাহা দ্বারা ওযূ বা গোছল করা জায়েয নহে। (অবশ্য যদি বেশী পানি থাকে, তবে জায়েয হইতে পারে। কিন্তু যে পানি ওযূ বা গোছলের জন্য রাখা হয়, তাহা দ্বারা পিপাসা নিবারণ করা জায়েয আছে।)
৭। মাসআলাঃ কূপে যদি দুই একটি ছাগলের লেদী পড়িয়া যায় এবং তাহা আলাদাই বাহির করিয়া ফেলা হয়, তবে তাহাতে কূপ নাপাক হইবে না। (এই হুকুম শুধু ছাগলের লেদীর জন্য, গরুর গোবরের জন্য নহে।)